নতুন আতংকের নাম রাসেলস ভাইপার।
বাংলাদেশের নতুন এক আতঙ্কের নাম রাসেল'স ভাইপার এক ছোবলই যথেষ্ট। ধানক্ষেত থেকে শুরু করে অন্যান্য ফসলের মাঠ বাসাবাড়ি সব জায়গায় এর আনাগোনা। সাম্প্রতিক সময়ে এটি বাংলাদেশের হট টপিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। একে কেউ চন্দ্রবোড়া আবার কেউ উলুবোড়া নামে ডাকে। এক্সময় বাংলাদেশে এটি বিপন্নপ্রায় প্রাণি হলেও বর্তমানে এর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সূচিপত্রঃ
- রাসেল'স ভাইপার নামকরণ
- রাসেল' ভাইপারের আবাসস্থান
- বাংলাদেশে এর অবস্থান
- শিকারের ধরন ও কৌশল
- প্রজননের সময় কাল
- তাপমাত্রার সাথে সাপে কাটার সম্পর্ক
- কোন শ্রেণীর মানুষ বেশি আতঙ্কের মধ্যে
- রাসেল'স ভাইপার কামড়ালে কি করবেন না?
- সাপে কাটলে করণীয় কি?
রাসেল'স ভাইপার এর নামকরণঃ
স্কুটি সার্জন ও ন্যাচারালিস্ট পেট্রিক রাসেলের নাম অনুসারে রাসেল'স ভাইপার নামকরণ করা হয় । তিনি প্রথম ১৯৮৬ সালে একটি বই লিখেন যেখানে এই সাপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলেন। অঞ্চলভেদে রাসেল'স ভাইপার উলুবোড়া ও চন্দ্রবোড়া নামে পরিচিত। বাংলাদেশের বিষধর সাপের মধ্যে একটি হচ্ছে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া বা রাসেল'স ভাইপার।
রাসেল'স ভাইপারের আবাসস্থানঃ
ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান আর মিয়ানমারে এর বিচরন অর্থাৎ এটি ভারত উপমহাদেশই পাওয়া যায়। বাংলাদেশের কিছু কিছু জেলায় দেখা গেলেও বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চল, খুলনা ও চট্টগ্রামে এই চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া সাপের আবাসস্থান।
বাংলাদেশে এর অবস্থানঃ
১৯৮২ সালে বাংলাদেশের প্রখ্যাত প্রাণীবিদ আলী রেজা খান চন্দ্রবোড়া সাপ শনাক্ত করেন। এক সময় এর সংখ্যা কমে গেলে তাকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়, কিন্তু দিন দিন এর সংখ্যা বাড়ছে বিশেষ করে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীর তীরে এমনকি শুধু বরেন্দ্র অঞ্চল, খুলনা বিভাগ, পটুয়াখালী ও চট্টগ্রামেই নয় দেশের আরো বেশ কিছু জেলায় এই সাপ বংশবিস্তার করে তুলেছে।
এর স্বভাব ও শিকারের কৌশলঃ
রাসেল'স ভাইপার অতি শান্ত প্রকৃতির সাপ। তবে বিরক্ত হলে এরা হিস হিস শব্দ করে। এদের বসতবাড়ির আশেপাশে দেখা যায়। এদের প্রধান খাদ্য ইঁদুর, টিকটিকি ও ব্যাঙ। রাসেল'স ভাইপার শিকার ধরার সময় খুব কৌশল অবলম্বন করে। এরা শিকারিকে কামড় দিয়েই ছেড়ে দেয়। বিষের যন্ত্রণায় শিকার পালিয়ে গেলেও সাপ তার পিছু নেয় এবং শিকারকে খেয়ে ফেলে।
প্রজনন ক্ষমতা ও সময়কালঃ
গোখরা সাপ ডিম দিলেও রাসেল'স ভাইপার সরাসরি বাচ্চা দিয়ে থাকে। একটি স্ত্রী রাসেল'স ভাইপার ৪০ থেকে ৮০টির মত বাচ্চা দিয়ে থাকে। এদের প্রজননকাল মূলত মে থেকে আগস্ট মাস তবে অন্যান্য সময়েও প্রজনন ঘটে।
তাপমাত্রার সাথে সাপে কাটার সম্পর্ক কি?
আমরা জানি শীতল রক্তের প্রাণী সাপ। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া রাসেল'স ভাইপার বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ। জিরো পয়েন্ট আট ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা বাড়লে সাপে কাটার হার ৬ শতাংশ বাড়ে।
কেন ভয়ানক এ রাসেল'স ভাইপার?
১০৪ প্রজাতির সাপ আছে তার মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ বিষাক্ত রাসেল'স ভাইপার। বিষাক্ত হওয়ার কারণ সাপটি প্রতি সেকেন্ডে ১৬ ভাগের একভাগ সময় নেয় দংশনের জন্য বিষ ঢেলে দিতে। এর বিষ দাঁত ০.৬৫ ইঞ্চি যা বিষাক্ত হওয়ার আরেকটি কারণ।
রাসেল'স ভাইপারের কামড়ে শরীরে যেসব উপসর্গ দেখা যায়ঃ
দংশনের সাথে সাথে সাপটি বিষ ঢেলে দেয়, ফলে দেহে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং দেহে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। কামড়ানো স্থান ফুলে যায় এবং প্রচন্ড ব্যথা করে। দাঁত ও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে এবং রক্তবমি হয় কিডনি বিকল হয়ে পড়ে প্রসাবে সমস্যা হয়। এসব হয় কারণ সাপের বিষে হেমাটক্সিন থাকায় লোহিত রক্ত কণিকাকে নষ্ট করে ফেলে আর শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। লোহিত রক্ত কণিকার কাজ হল রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করা। এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হয় এমনকি হৃদপিণ্ড কলিজায় ফুসফুস এর রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহন না করলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
রাসেল'স ভাইপার কামড়ালে কি করবেন না?
শক্ত করে বাঁধন দেওয়া ও কাটাছেঁড়া করা যাবে না। মুখ দিয়ে চুষে রক্ত বের করা যাবে না। কাটা ছেঁড়া করা যাবে না, করলে রক্তক্ষরণ বেশি হবে এবং রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এমনকি কামড়ানো জায়গায় বেশি নড়াচড়া করা যাবে না, বেশি নড়াচড়া করলে বিষ তাড়াতাড়ি শরীরে ছড়িয়ে পড়বে। কামড়ানো স্থানে কোন প্রকার তাপ বা রাসায়নিক দেওয়া যাবে না।
রাসেল'স ভাইপার কাটলে করণীয় কি?
কামড়ানো জায়গাটি ওপর নিচ হালকা করে কাপড় বা ব্যান্ডেজ দিয়ে পেঁচিয়ে রাখতে হবে। বেশি নাড়াচাড়া করা যাবে না যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে এবং অ্য়ান্টিভেনম নিতে হবে। পারলে ১০০ মিনিটের মধ্যেই অ্য়ান্টিভেনম নিতে হবে
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url